বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫, ০১:৪৯ অপরাহ্ন

লালমনিরহাটে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, বাড়িঘর ভাংচুর, আহত ৮

লালমনিরহাটে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, বাড়িঘর ভাংচুর, আহত ৮

জিন্নাতুল ইসলাম জিন্না, লালমনিরহাট প্রতিনিধি:: লালমনিরহাটে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয়পক্ষের ৮ জন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে রোহান ও সিজান নামের দুই যুবক গুরুতর আহত হয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এ ঘটনায় চাজনকে আটক করেছে লালমনিরহাট সদর থানা পুলিশ।

শুক্রবার (৭ মার্চ) রাত সাড়ে ১০টার দিকে জেলা শহরের ডায়াবেটিকস্ হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

সংঘর্ষে সিজান (২০), রোহান (২২), দুলালী, জাহানারা, আব্দুল হামিদসহ অন্তত আটজন আহত হয়। এদের মধ্যে ওই এলাকার আব্দুস সালামের ছেলে সিজান (২০) ও একই এলাকার ফরহাদ মিয়ার ছেলে রোহান (২২) গুরুতর আহত অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

আটকৃতরা হলেন- ওই এলাকার শফিকুল ইসলামের ছেলে জিয়ারুল ইসলাম (২৩), সৈকত (১৮), শাহিনুর ইসলাম (২৬) ও সজিব (২৫)।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, জুম্মার নামাজের সময় হাসা-হাসিকে কেন্দ্র করে দুপুরে শহরের ডায়াবেটিক হাসপাতাল এলাকার শফিকুল ইসলামের ছেলে সজিব গংদের সাথে কথাকাটাকাটি হয় একই এলাকার অটোচালক আব্দুস সালামের ছেলে জিসানের সাথে। সে সময় জিসানকে একা পেয়ে মারধর করে সজিবরা। পরে জিসানের বাবা ও মা সহ এলাকার কয়েকজন প্রতিবাদ করতে গেলে মারধরের শিকার হন আব্দুস সালাম। এসময় একটি মোবাইল ছিনিয়ে নেয় শফিকুল গংরা। পরে আহত সিজান ও তার পরিবারকে দেখতে সিজানের বন্ধুরা সন্ধ্যায় জিসানের বাসায় আসলে শফিকুল ইসলামসহ তার ছেলে ও সহযোগীরা পূনরায় আব্দুস সালামদের উপর হামলা করে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়।

লালমনিরহাটে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয়পক্ষের ৮ জন আহত হয়েছে।

পরে ছিনিয়ে নেওয়া মোবাইল ফেরত দেওয়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে রোহান ও জিসানকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা করে গুরুতর আহত করে। পরে স্থানীয় লোকজন রোহান ও জিসানকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে জিসানের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় চিকিৎসকরা তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। এর কিছুক্ষণ পর জিসানের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এরই মধ্যে পুলিশ এসে শফিকুলের চার ছেলেকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়ার পথে উত্তেজিত শত শত জনতা তাদেরকে পুলিশ ভ্যান থেকে নামিয়ে নিয়ে মারতে চেষ্টা করে। এরমধ্যেই কিছু উত্তেজিত জনতা পুলিশ ভ্যানে উঠে তাদেরকে মারধরও করে। এরপরে পুলিশ দ্রুত গাড়ি নিয়ে থানায় চলে যায়। পুলিশ তাদেরকে নিয়ে গেলে পরে উত্তেজিত জনতা শফিকুলের বাড়ি-ঘরে আক্রমন করে ব্যাপক ভাংচুর চালায়। পরে সেনা টহলটিম, র‌্যাব ও পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সেখানে উত্তেজিত শত শত জনতা অবস্থান করছে। যে কোন মুহুর্তে আবারও রক্তক্ষয়ী ঘটনা ঘটতে পারে। যদিও ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা রয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা রমজান আলী জানান, শফিকুল ও তার পরিবারের অত্যাচারে অতিষ্ঠ মানুষজন। শফিকুল নিজে একজন দাদন ব্যবসায়ী। পাশাপাশি তার পাঁচ ছেলে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। দাদন ব্যবসা ও ছেলেদের মাদক ব্যবসার কারনে অল্পদিনের মধ্যেই তারা অনেক টাকার মালিক বনে যান। যে কারনে শফিকুল ও তার ছেলেরা এলাকার কাউকে মানুষ হিসেবে মনে করে না। ছেলেদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটলেও শফিকুল নিজে উপস্থিত থেকে ছেলেদের মারামারি করতে আদেশ দেন। যে কারনে আজকে এই রক্তক্ষয়ী ঘটনা ঘটে। তিনি পুলিশ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচার দাবি করেন।

বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও যেকোনো মুহূর্তে ওই এলাকায় আবারও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা রয়েছে বলে মনে করছেন এলাকার সচেতনরা।

এ বিষয়ে লালমনিরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) নুরনবী বলেন, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসেছি। বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ঘটনাস্থলে থানা পুলিশ, ডিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন। সংঘর্ষের ঘটনায় চারজনকে আটক করা হয়েছে।

লালমনিরহাট অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ-সার্কেল) একেএম ফজলুল হক সাংবাদিকদের জানান, ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনার সাথে জড়িত চারজনকে আটক করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ ঘটনায় আহতদের পরিবার অভিযোগ দায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com